আমরা লাফ দিয়ে উপরের দিকে উঠতে চাইলে বেশি দূর উঠতে পারি না। আবার ভূপৃষ্ঠে ফিরে আসি । গাছের ফল মাটিতে পড়ে। ক্রিকেট বলকে উপরের দিকে ছুড়ে দিলে মাটিতে পড়ে। এর কারণ কী? কারণ পৃথিবী আমাদেরকে তার নিজের দিকে টানে বা আকর্ষণ করে। শুধু পৃথিবী কেন, সবকিছুই আমাদের আকর্ষণ করে। আসলে এ মহাবিশ্বের প্রত্যেকটি বস্তুকণা একে অপরকে নিজের দিকে আকর্ষণ করে। এই আকর্ষণ বলকে মহাকর্ষ বলে।
তোমরা নিশ্চয়ই নিউটন ও আপেল মাটিতে পড়ার কাহিনী শুনে থাকবে। কথিত আছে, নিউটন একদিন বাগানে বসে চিন্তা করছিলেন। এমন সময় তিনি গাছ থেকে একটি আপেল মাটিতে পড়তে দেখেন। তাঁর মনে প্রশ্ন জাগে, আপেলটি মাটিতে পড়ল কেন? নিশ্চয়ই কেউ একে মাটির দিকে টানছে। চিন্তা-ভাবনা শেষে তিনি এ সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, পৃথিবী সকল বস্তুকে তার নিজের দিকে টানে। পরে তিনি আরও সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, শুধু পৃথিবী নয়, এ মহাবিশ্বের সকল বস্তুকণাই একে অপরকে নিজের দিকে আকর্ষণ করে। এ বিশ্বের যেকোনো দুটি বস্তুর মধ্যে যে আকর্ষণ তাকে মহাকর্ষ বলে।
দুটি বস্তুকণার মধ্যকার এ আকর্ষণ বলের মান শুধু বস্তুদ্বয়ের ভর এবং এদের মধ্যকার দূরত্বের উপর নির্ভর করে। এদের আকৃতি, প্রকৃতি কিংবা মাধ্যমের প্রকৃতির উপর নির্ভর করে না। বস্তুদ্বয়ের ভর বেশি হলে, আকর্ষণ বলও বেশি হয় আর তাদের মধ্যে দূরত্ব বেশি হলে বল কম হয়। এ আকর্ষণ সম্পর্কে নিউটনের একটি সূত্র আছে যা নিউটনের মহাকর্ষ সূত্র নামে পরিচিত।
সূত্র : মহাবিশ্বের প্রতিটি বস্তুকণা একে অপরকে নিজের দিকে আকর্ষণ করে এবং এ আকর্ষণ বলের মান বস্তুকণাদ্বয়ের ভরের গুণফলের সমানুপাতিক এবং এদের দূরত্বের বর্গের ব্যস্তানুপাতিক এবং এ বল বস্তুকণাদ্বয়ের সংযোজক সরলরেখা বরাবর ক্রিয়া করে।
ধরা যাক, m এবং mg ভরের দুটি বস্তু পরস্পর থেকে d দূরত্বে অবস্থিত (চিত্র ৭.১)। এদের মধ্যকার আকর্ষণ বল F হলে, মহাকর্ষ সূত্রানুসারে,
.
এখানে G একটি সমানুপাতিক ধ্রুবক। একে বিশ্বজনীন মহাকর্ষীয় ধ্রুবক বলে। এর অর্থ হচ্ছে এক কিলোগ্রাম ভরের দুটি বস্তু এক মিটার দূরত্বে স্থাপন করলে এরা পরস্পরকে যে বলে আকর্ষণ করে তা G এর সমান।
মহাকর্ষ সূত্রানুসারে আমরা দেখতে পাই, নির্দিষ্ট দূরত্বে অবস্থিত দুটি বস্তুর ভরের গুণফল দ্বিগুণ হলে বল দ্বিগুণ হবে, ভরের গুণফল তিনগুণ হলে বল তিনগুণ হবে। আর নির্দিষ্ট ভরের দুটি বস্তুর দূরত্ব দ্বিগুণ করলে বল এক-চতুর্থাংশ হবে, দূরত্ব তিনগুণ করলে বল নয় ভাগের এক ভাগ হবে। মহাকর্ষ বলের প্রভাবে পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘুরে। এবার বলো, অন্য সকল গ্রহ সূর্যের চারদিকে ঘুরে কেন?
আরও দেখুন...